চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্রণের নাম একনিভালগারিস। আমাদের ত্বকের নিচে সূক্ষ্ম গ্ল্যান্ড আছে। নাম সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড। এটির ক্ষয়জনিত রোগের নাম ব্রণ। পাইরোসেবাসিয়াস গ্ল্যান্ডের গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এক ধরনের সাদা রস বা সিবাম। দীর্ঘ গ্রন্থিপথ বেয়ে তা চামড়ার বাইরে নিঃসৃত হয়। এ গ্রন্থিপথ কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে সৃষ্টি হয় ত্বকের ওপর গোটা আকারে ব্রণ। মেয়েদের ব্রণ বেশি হয় ১৫-১৭ বছরের মধ্যে। ছেলেদের ১৭-১৯ বছরের মধ্যে। দেখা যায়, ৯০ শতাংশ রোগীর বয়স ২৩-২৫ বছর হলেই ব্রণ আর থাকে না। ৩০-৪০ বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবার ব্রণ হতে দেখা দিতে পারে।
ব্রণের কারণ : সিবামের ক্ষরণ বাড়লে ব্রণ হবে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। একরোমেগালি ও পারকিনসনের রোগীর ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, সিবামের ক্ষরণ বেড়ে গেলেও ব্রণ হয় না। ব্রণের সাদা ক্ষরণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে অতিরিক্ত ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এনড্রোজেন নামক পুরুষ হরমোন সিবামের ক্ষরণ বাড়ায়। দেখা গেছে, ব্রণ পারিবারিক ও বংশানুক্রমেও হয়েছে। বাবা-মায়ের থাকলে সন্তানের হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ব্রণ সৃষ্টিতে ব্যাকটেরিয়া বা এক ধরনের জীবাণু ভূমিকা পালন করে। আমাদের ত্বকে থাকে এক ধরনের জীবাণু, নাম প্রোপাইনোব্যাকটেরিয়াম একনি। ঘাম নিঃসরণনালিতে এ জীবাণু বাসা বাঁধে। এ জীবাণুটি সিবামের ট্রাইগ্লিসারাইড ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে রূপান্তর হয়। ব্রণ সৃষ্টিতে এটা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক। ব্রণ সারা শরীরে হয় না। মূলত মুখে, কাঁধে, পিঠে ও বুকের ওপরের অংশে হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী বা কসমেটিকস থেকে ব্রণ হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের তেল, তৈলাক্ত প্রসাধনী, টার ও ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বনস। কিছু ওষুধও ব্রণের কারণ হতে পারে। যেমন- লিথিয়াম, কর্টিকোস্টেরয়েড, ইস্ট্রোজেন, টেসটোসটেরন, ফেনায়টইন ইত্যাদি।
চিকিৎসা : কিছু ওষুধ ব্রণে ব্যবহার করতে হয়। কিছু ওষুধ খেতে হয়। ব্যাকটেরিয়া-বিরোধী একটি ওষুধ ক্লোরহেক্সিডিনের পাতলা দ্রবণ ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার রাখে। এটা বাজারজাত করা হয়েছে ’হিব্রিস্ক্রাব’ নামে। আরেকটি ওষুধ ফেনকোসিল ফাইফজেল। এটি প্রতিদিন রাতে একবার ত্বকে দিতে হয়। আরেকটি ওষুধের নাম নিওমেড্রোএকনিলোশন। অনেক সময় চিকিৎসকরা আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মিও ব্যবহার করে থাকেন। যেহেতু এর কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া দায়ী, অ্যান্টিবায়োটিক এটাতে কাজ করে। এটি তিন মাসের কম ব্যবহার করা যায় না। অনেক সময় ২-৩ বছর ব্যবহার করতে বলা হয়। যেহেতু দীর্ঘ সময় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, এ জন্য ২-৩ মাস পর পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যে ব্রণ পুরুষের ক্ষেত্রে হরমোনজনিত কারণে সৃষ্টি হয়, তা নিরাময়ে হরমোনবিরোধী ওষুধ- সিফ্রোটেরন এসিটেট বা ইস্ট্রোজেন পিল দেওয়া যায়। অ্যান্টিবায়োটিকে না সারলে ইস্ট্রোজেন পিল কার্যকর। অনেক সময় ব্রণ আকারে বাড়ে। নাম সিস্ট। যাদের ব্রণ মুখজুড়ে ছড়িয়ে থাকে, কসমেটিকস তাদের মুখে ব্যবহার করা নিষেধ। সারা দিনে তাজা ঠাণ্ডা্ পানির ঝাপটা দিয়ে বারবার মুখ ধুয়ে লোমকূপের গোড়া পরিষ্কার রাখতে হবে।
Leave a Reply